ঢাকা , সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ , ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

রমজান শুরুর আগেই বাজার অস্থির, সংকট সয়াবিন তেলের

আপলোড সময় : ০১-০৩-২০২৫ ১০:০১:৪১ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ০১-০৩-২০২৫ ১০:০১:৪১ পূর্বাহ্ন
রমজান শুরুর আগেই বাজার অস্থির, সংকট সয়াবিন তেলের
এ বছরও রমজানের আগে স্বস্তি নেই বাজারে। কোনো কোনো বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানেও তেলের চড়া দাম ক্রেতাদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। শশা ও বেগুনের দাম দ্বিগুণেরও বেশি রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কোনো পণ্যের সংকট হবে না, তবে বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না।

গত কয়েকদিন ধরেই বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটের অভিযোগ তুলছেন ক্রেতারা।

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর, মগবাজার, বনশ্রী, মিরপুর, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে এবং সেসব এলাকার স্থানীয় ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা দোকানে পাওয়াটা তো পরের ব্যাপার, সুপারশপগুলোতেও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

কোনো কোনো খুচরা দোকানে সর্বোচ্চ এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তার জন্য ক্রেতাদেরকে গুণতে হচ্ছে বাড়তি দাম।

এদিকে, বোতলজাত সয়াবিন তেল কম থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে গেছে।

ইফতারে বহুল ব্যবহৃত পণ্য শসা, বেগুনের দাম বাড়তির দিকে। সবজির বাজারও চড়া। সাধারণ মানুষের আমিষের অন্যতম অনুসঙ্গ মুরগির দামও বাড়তির দিকে।

শুক্রবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের সামনে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যেই তেল, খেজুর, ছোলাসহ রমজানের যত পণ্য আছে সব পণ্যের দাম কমবে এবং সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসবে। এছাড়া যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যপণ্য মজুদ থাকায় কোনো সংকট হবে না।

এর আগেও গত দুই মাসে একাধিকবার তিনি বলেছেন, রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত বাজারে সরকারের চেষ্টার প্রভাব দেখা যায়নি।


সয়াবিন তেল নিয়ে ক্রেতাদের ভোগান্তি

ক্রেতা ও বিক্রেতা, উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে গত প্রায় ১৫ দিন থেকে এক মাস ধরে সয়াবিন তেল নিয়ে সংকট চলছে। রমজান ঘনিয়ে আসায় এই সংকট আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

চাকরির সুবাদে ঢাকার বনশ্রীতে থাকেন মারিয়া আক্তার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুটি সুপার শপ ঘুরেও সয়াবিন তেল পাননি বলে জানান তিনি।

মিজ আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলেন, "তেল কেনা লাগতোই। সুপারশপে না পেয়ে অন্তত ১০টা নরমাল দোকানে খুঁজেছি, তেল নাই কারও কাছে। পরে বাধ্য হয়ে হাফ লিটার সরিষার তেল কিনে এনেছি।"

একই এলাকার বাসিন্দা সোহানুর রহমান জানান, ১০-১৫টা দোকান ও সুপারশপ ঘুরেও সয়াবিন তেল পাননি তিনি। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, অবশেষে একটি দোকানে তেল পেলেও বোতলের গায়ের মূল্য ছিল ১৭৫ টাকা, কিন্তু তা কেনার জন্য তার খরচ করতে হয়েছে ১৯০ টাকা।

সয়াবিন তেল কেনা নিয়ে আরও তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী জেরিন আফরিন।

তিনি বলেন, "বেশ কিছুদিন ধরেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এক দোকানে পেয়েছিলাম। কিন্তু বেশি দাম পড়েছে, এক লিটার কিনেছি ১৯০ টাকা দিয়ে।"

"আরও এক দোকানেও ছিল। কিন্তু সেই দোকানে বলেছে, বোতল নিলে অন্য কিছুও সাথে নিতে হবে, ডিটারজেন্ট বা আটা। নইলে তারা শুধু তেল বিক্রি করবে না," বলেন মিজ আফরিন।

শুক্রবার মগবাজারের চারুলতা মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, দোকানগুলোয় সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এক লিটারের বোতলজাত বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা দরে।


তেলের সংকট নিয়ে বিক্রেতাদের ভাষ্য

এদিকে, ক্রেতাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গুলশানের একটি সুপারশপে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, সয়াবিন তেলের এক থেকে পাঁচ লিটারের বোতল, সব-ই পাওয়া যাচ্ছে।

তবে সুপারশপগুলোর কোনো কোনো ব্রাঞ্চে তেল পাওয়া যাচ্ছে না কেন– জানতে চাইলে গুলশানের ওই সুপারশপের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, "মূল কারণ, সাপ্লাই কম। তবে আমাদের এখানে সবসময়ই কম-বেশি পাওয়া যাচ্ছে।"

"সমস্যা হয় রাতের বেলা। মাঝে দেখা যায়, যা থাকে তা দিনের বেলায় শেষ হয়ে যায়। রাতে যদি কেউ কিনতে আসে, তখন তাদেরকে অনেকসময় দিতে পারি না," বলছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের চার থেকে পাঁচটি দোকানের বিক্রেতাদের সাথে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। তারা প্রত্যেকেই বলেন, তেলের সরবরাহ কম হওয়ায় এই সংকট শুরু হয়েছে।

মিজানুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, "১৫ দিন থেকে এক মাস ধরে তেলের বাজার এরকম। কারওয়ান বাজারের মতো জায়গায়ই পর্যাপ্ত তেল পাওয়া যায় না। সেখানে অন্য জায়গায় তো পাওয়াই যাবে না। তাই মহল্লার দোকানে যেতে যেতে তেলের দাম বাড়ে।"

"সাপ্লাই আসতেছে না, কোম্পানিরে তেল দিলে বাজারে আসতো," যোগ করেন তিনি।


সবজির দাম বাড়তি, প্রভাব আছে আমিষেও

শুধু সয়াবিন তেল না, বিভিন্ন শীতকালীন সবজি ও মুরগির দামও বেড়ে গেছে। বেগুনের দাম দ্বিগুণেরও বেশি এবং শশার দাম ১০০ টাকার নিচে না।

ঢাকার অন্যতম প্রধান পাইকারি ও খুচরা বাজার হলো কারওয়ান বাজার। অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানে জিনিসপত্রের দাম অনেকটা সস্তা। সেই কারওয়ান বাজারেও এখন সবজির দাম বেড়ে গেছে।

সবজি বিক্রেতা মেরাজ মিয়া বলেন, "গত সপ্তাহের চেয়ে দাম সামান্য বাড়তি। প্রতি আইটেমে তিন থেকে পাঁচ টাকা বাড়ছে।"

আরেকজন সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, "দিন যত যাইবো, দাম বাড়বো। কারণ রোজা আইছে না!"

মান, আকার ও দোকানভেদে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কম-বেশি হতে দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারের তুলনায় মগবাজার, বনশ্রী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় গিয়ে একই ধরনের সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, এই ধরনের কোনো পণ্যের দাম-ই সাম্প্রতিক সময়ে বাড়েনি।

দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে আমিষেও। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন কেজিপ্রতি সোনালি মুরগির দাম ৩৬০-৩৭০ এবং ব্রয়লারের কেজি ২১০ টাকা। কিছুদিন আগেও এগুলো ৩৫০ টাকা ও ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হতো।

বিক্রেতারা বলছেন, তারা এখন বেশিদামে মুরগি কিনছেন। তাই বিক্রির দামও বেশি পড়ছে। সেইসাথে, বাজারে এখন মুরগির সরবরাহ বলেও দাবি করছেন তারা।

বাশারুল করিম নামে একজন ক্রেতা ফার্মগেট থেকে বাজার করতে কারওয়ান বাজারে আসেন শুক্রবার। তিনি বলছিলেন, "রোজা আসতে না আসতেই মুরগির দাম বাড়ায়ে দিছে। আগের সরকারের সময়েও যা ছিল, এখনও তা-ই আছে। নো চেঞ্জ।"

এছাড়া, কেজিপ্রতি খাসির মাংসের দাম এখন ১৩০০ টাকা এবং গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা।

মাংস বিক্রেতা নুরূল ইসলাম বলেন, "গরু-খাসির দাম গত এক মাস ধরে এরকমই। তবে রমজানে দাম কমবে। কারণ এতদিন শীতের সময় ছিল, অনুষ্ঠান বেশি ছিল। মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় তখন দামটাও বেশি ছিল। রমজানে চাহিদা কমবে।"

নিম্ন আয়ের মানুষ আমিষের চাহিদা পূরণ করে ডিম দিয়েই। ডজনপ্রতি লাল ডিমের দাম এখন ১২৫ টাকা, সাদা ডিমের দাম ১২০ টাকা ও হাঁসের ডিমের দাম ২২০ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, ডিমের দাম বাড়েনি। বরং, আগের চেয়ে কমেছে।

মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ মাছ ছাড়া সব মাছের দাম আগের মতোই। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে মাছের সরবরাহ ঠিকঠাক থাকায় দাম বাড়েনি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ